মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:২১ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : মৌলভীবাজারের রাজনগরে সরকারিভাবে আমন ধান ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগের লোকজনের সাথে সিন্ডিকেট করে একটি চক্র প্রকৃত আমন চাষিদের বাদ দিয়ে কৃষক তালিকা তৈরি করেছে। এতে ক্ষুব্ধ প্রকৃত আমন চাষিরা তালিকা বাতিল করে প্রকৃত চাষিদের নিয়ে নতুন তালিকা তৈরির দাবি জানিয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কার্যালয়-সূত্র জানায়, এবছর সরকারিভাবে উপজেলা থেকে ১৪শ ১৭ টন আমন ধান ক্রয়ের লক্ষে বিক্রেতা তালিকায় উপজেলার সাড়ে ৯ হাজার কৃষক তালিকাভুক্ত হন। ইউনিয়ন কৃষি কর্মকর্তাগণ এই তালিকা প্রস্তুত করেন। সেই তালিকা থেকে লটারি করে ১হাজার ৪ শ ১৭জন কৃষক মনোনীত হন।
প্রান্তিক কৃষকরা অভিযোগ করেন, মূল তালিকায় প্রকৃত কৃষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বরং মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে গড়ে ওঠে একটি সিন্ডিকেট চক্র। এই চক্র আমন চাষিদের বাইরে বোরো চাষি, সবজি চাষিদের কৃষি কার্ড কৌশলে হাতিয়ে নিয়ে এদের তালিকাভুক্ত করে। তালিকা যাচাই করে দেখা যায়, একজন কৃষকের নাম একাধিকবার এসেছে। একই মোবাইল ফোন নাম্বার ব্যবহার করেছেন একাধিকজন। এরমধ্যে ১টি ফোন নাম্বার ব্যবহার করেছেন ৫৭জন। উত্তরভাগ ইউনিয়নের উত্তরভাগ গ্রামের ১৫৮ জন কৃষকের অর্ধেকের বেশী ভুয়া।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ একটি চক্র আমন চাষ করেনি এমন চাষিদের কার্ড অল্প টাকায় ক্রয় করে বিক্রেতা তালিকায় নাম তুলেছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, শুধুমাত্র ফতেহপুর ইউনিয়নে লটারিতে অংশ নেয় ২২৫জন কৃষক। এরমধ্যে মনোনীত হন ৩৬জন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে যাচাই করে দেখা যায় এরমধ্যে ২০জনই ভুয়া। যাদের আমন চাষ নেই আবার কেউ কেউ বিদেশে থাকেন। যাচাই বাচাই করে যারা ভুয়া তাদেও বাদ দেয়া হচ্ছে বলেও জানায় কৃষি বিভাগ। এই চিত্র উপজেলার বাকি ৭ টি ইউনিয়নের।
ফতেহ পুর ইউনিয়নের ছোয়াব আলী গ্রামের কৃষক জলাল মিয়া বলেন, যারা মনোনীত হয়েছে তাদের অধিকাংশের কৃষি কার্ড হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। কেনো কোনো কৃষককে ৪শ-৫শ টাকা দিয়েও কার্ড হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। এসব কার্ড যখন লটারিতে মনোনীত হলে সাধারণ কৃষকদেরও থেকে অল্প টাকায় ধান কিনে সিন্ডিকেট চক্র সরকারের কাছে বেশি দামে বিক্রি কওে দিচ্ছে।
গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক বদরুল আলম ও আয়াছ মিয়া বলেন, আমন চাষীদেও যে তালিকা হচ্ছে তা প্রকৃত চাষীদেও জানতেই দেয়া হয়নি। ইউনিয়ন কৃষি কর্মকর্তারা সিন্ডিকেট চক্রকে নিয়ে গোপনে এই তালিকা করেছেন। ফলে ধান বিক্রয়ে সরকারের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত চাষিরা।
রাজনগর উপজেলা কৃষি কর্মকতা মো.শাহাদুল ইসলাম তালিকায় অসংগতির অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, লটারিতে নির্বাচিত কৃষক তালিকা অধিকতর যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। প্রকৃত আমন চাষি না হলে কার্ড জব্দ করা হচ্ছে। এরমধ্যে অনেক কার্ড জব্দ করা হয়েছে। আর তালিকা তৈরি করার কাজে জড়িতদের চিহ্নিত করতে কাজ চলছে।
উপজেলা ধান সংগ্রহ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌসি আক্তার বলেন, বিষয়টি দু:খজনক। অনিয়মের অভিযোগ শুনার পর আমন ধান বিক্রয়ের আরেকটি কৃষক তালিকা তৈরির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। লটারিতে যারা মনোনীত হয়েছেন যাচাই বাচাই কওে প্রকৃত চাষিদের ধান কেনা হচ্ছে। পরবর্তীতে সংশোধিত তালিকা থেকে আরেকটি লটারির করা হবে। তখন আর প্রকৃত আমন চাষিরা বঞ্চিত হবেন না। সেই সাথে কিভাবে ভুয়া কৃষক তালিকায় ঢুকেছে তা নিয়ে আমরা কাজ করছি এবং সিন্ডিকেটকে সনাক্ত করার চেষ্টা করছি।